দেশি-বিদেশি জাতের গরুর সমাহার

২০১০ সালে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়িতে ১৮৭ একর জায়গায় গড়ে তোলা হয় সারা অ্যাগ্রো ফার্ম। প্রথমে ২০টি গরু দিয়ে যাত্রা শুরু। বর্তমানে খামারটিতে একশ’র অধিক গরু রয়েছে। পাশাপাশি চলছে ছাগল পালনও। নগরীর চাঁন্দগাও থানাধীন কালুরঘাট শিল্প এলাকার ইকবাল এন্টারপ্রাইজ ডিপোর ৫ কানি জায়গার ওপর সারা অ্যাগ্রো ফার্মের আরেকটি শাখা খোলা হয়েছে।

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মানিকছড়ির ফার্মে পালন করা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের প্রায় শতাধিক গরু আনা হয়েছে কালুরঘাটের সারা অ্যাগ্রো ফার্মে। খামারটিতে রয়েছে-সিংদি, শাহীওয়াল, ব্রামান, গিড়, ইলুবাড়ি ও দেশালসহ উন্নত জাতের গরু। দামও ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে। ইতোমধ্যে খামারটিতে বেড়েছে ক্রেতার আনাগোনা।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধমুক্ত সারা অ্যাগ্রো ফার্মের খামারের চতুরপাশে সারি সারি গরু। শান করা ঘর। উপরে রয়েছে তাপ নিরোধক ব্যবস’া। নিচেও পাকা করা। আরামদায়ক বিছানার জন্য প্রতিটি গরুর নিচে ম্যাট পাতা। ওপরে ঘুরছে ফ্যান। গোবর ও প্রসাব পরিষ্কারের জন্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন একজন। গরুগুলোকে পাইপের মাধ্যমে পানি দিয়ে গোসলে করাতে ব্যস্ত শ্রমিকরা। দূরত্ব বজায় রেখে একটির সাথে আরেকটির সহাবস’ান।

প্রতিদিন ৮ জন শ্রমিক কাজ করছেন খামারে। এককথায় যত্নের কোনো কমতি নেই। ক্রেতাদের গাড়ি পার্কিংয়েরও ব্যবস’া রয়েছে ফার্মের ভেতর। নিরাপত্তার সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনে রাখা হয়েছে দুই প্রহরী।
জানতে চাইলে সারা অ্যাগ্রো ফার্মের ব্যবস’াপনা পরিচালক আলিফ চৌধুরী বলেন ‘আমাদের খামার শতভাগ প্রাকৃতিক। কারণ প্রাকৃতিকভাবেই গরুর পরিচর্যা করা হয়। সম্পূর্ণ মেডিসিনবিহীন প্রাকৃতিক উপায়ে ভালো খাবার পরিবেশন এবং সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে গুরু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। মানিকছড়ির নিজস্ব ফার্ম থেকে এগুলো আনা হয়েছে। হাটের গরু নিয়ে এখন অনেক অভিযোগ শোনা যায়। কোরবানির মাংসও অনেক সময় খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। মূলত অপরিকল্পিতভাবে গরু মোটাতাজাকরণের

কারণেই এমনটি হচ্ছে। আমরা কোনোরকম ওষুধ ব্যবহার করি না। প্রাকৃতিক উপায়ে ভালো খাবার পরিবেশন এবং
সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমেই গরু মোটাতাজাকরণ করে থাকি। এছাড়া যে কোনো সমস্যায় পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়।’

বিকাল সাড়ে ৩টায় গরু দেখতে খামারে আসেন সুগন্ধা আবাসিকের বাসিন্দা ও হাবিব গ্রুপের কর্মকর্তা রিয়াদ হাসান। তিনি বলেন, ‘গরুগুলো সত্যিই নজর কাড়ছে। এক একটির আকার বিশাল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দেখে এর সত্যতা যাচাই করতে আসলাম। গরুর যে ছবিগুলো পোস্ট দেওয়া হয়েছিল বাস্তবেও সেরকম দেখতে পাচ্ছি। ভালো লাগছে। বাজার অনুযায়ী দামও সাধ্যের মধ্যে আছে মনে হচ্ছে।’
চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে আসা ওমর ফারুকও জানালেন একই কথা।

২০১২ সাল থেকে খামারে কাজ করা ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গরুগুলোকে প্রতিদিন দু’বেলা করে খাবার দেওয়া হয়। খাদ্য তালিকায় রয়েছে-গমের ভুসি, চালের কুঁড়া, সাদা ও লাল চনা, মিডিয়াম ভুসি, ভুট্টা, সয়াবিন ভুসি, মসুর ভুসি, রাপ। প্রতিটি গরুকে ৪ কেজি করে ভুসি খাওয়ানো হয়। এছাড়া শুকনো খড় তো আছেই। খামারে শাহীওয়াল, ব্রামান, গিড়, ইলুবাড়ি, দেশালসহ বিভিন্ন উন্নত জাতের গরু রয়েছে।’
বিকাল ৪টায় খামারে আসেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন। জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘সত্যি গরুগুলো দেখার মত। খামারের পরিবেশও সুন্দর ও দুর্গন্ধমুক্ত। দেশি-বিদেশি ভালো জাতের গরু দেখা যাচ্ছে। আশা রাখছি খামারটি ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।’